যে ৬ অর্থপ্রযুক্তি অর্থব্যবস্থার ভবিষ্যৎ বদলে দেবে


 যে ৬ অর্থপ্রযুক্তি অর্থব্যবস্থার ভবিষ্যৎ বদলে দেবে

করোনা মহামারীর ফলে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার যে প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে, তার ফলে প্রায় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরই অল্প সময়ের মধ্যে ডিজিটাল রূপান্তর সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে আর্থিক খাতের ডিজিটাল রূপান্তর দ্রুতগতিতে হচ্ছে। করোনা মহামারির নতুন বাস্তবতায় প্রতিষ্ঠানগুলির টিকে থাকার জন্যে ফিনটেক বা অর্থনৈতিক প্রযুক্তিতে নতুন উদ্ভাবন জরুরি হয়ে উঠেছে।

পাশাপাশি এটি যারা এখনও ব্যাংকিং সিস্টেমের আওতায় আসতে পারেনি বিশ্বব্যাপী এমন কোটি কোটি মানুষের এক বিশাল আর অপরিকল্পিত বাজারকে উন্মুক্ত করছে। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, এশিয়ায় ফিনটেক বা অর্থনৈতিক প্রযুক্তি দ্রুতগতিতে এবং ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাবে। এতে করে আগামি কয়েক দশক ধরে বিশ্ব অর্থনীতি অনেক দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে।
.

#১. ব্যাংকিং শিল্পের ভার্চুয়াল ভবিষ্যৎ

ফিনটেক সেক্টরের দ্রুত বিকাশের মধ্য দিয়ে ভার্চুয়াল ব্যাংকিং পুরো বিশ্বজুড়েই গতি পাচ্ছে। বর্তমানে অর্থ লেনদেন এবং অদূর ভবিষ্যতে বিনিয়োগের মতো ক্ষেত্রগুলিতে ভার্চুয়াল ব্যাংকিংয়ের ফলে স্বশরীরে ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড একেবারেই কমে আসবে। তখন যেসব ব্যাংক এখনো ডিজিটাল হয়ে উঠতে পারেনি, সেগুলি কীভাবে টিকে থাকবে? এখানেই ডিজিটাল রূপান্তর মূল বিষয়। বর্তমানে অর্থনৈতিক খাতে ডিজিটাল উদ্ভাবন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
.

# ২. শেয়ার বাজারে অংশগ্রহণ

ফিনটেক প্রতিষ্ঠান সহ দ্রুত বর্ধনশীল যেসব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান পাবলিক হতে চায়, তারা সাধারণত দ্বৈত-শ্রেণীর তালিকায়ন পছন্দ করে। এতে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং কার্যনির্বাহীরা এক শ্রেণীর শেয়ারের মাধ্যমে অধিক ভোটদানের ক্ষমতা সহ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সক্ষম হয়। আর দ্বিতীয় শ্রেণীর শেয়ার সাধারণ জনগণের কাছে বিক্রি করার মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহে সহায়তা করে।
.

# ৩. এআই (AI) বিপ্লব

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মূল চালিকাশক্তি বলে আখ্যায়িত করেছে। এতে মানুষ ও মেশিনের মধ্যে পরস্পর নির্ভরশীলতার একটি নতুন যুগের সূচনা হবে। এই প্রযুক্তির অন্যতম একটি উদাহরণ হল হ্যানসন রোবোটিক্স নির্মিত রোবট সোফিয়া। রোবটটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামাজিক যোগাযোগ করতে পারে। 

সৌদি আরব রোবটটিকে সম্পূর্ণ নাগরিকত্বও দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সোফিয়া বিশ্বের “প্রথম রোবট” হিসেবে ব্যক্তিত্ব এবং আইনি স্বীকৃতি অর্জন করছে। সোফিয়াকে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির প্রথম রোবট ইনোভেশন অ্যাম্বাসেডরও ঘোষণা করা হয়েছে।

হ্যানসন রোবোটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ডেভিড হ্যানসন সম্প্রতি বলেছেন যে, আমাদের বন্ধু এবং পরামর্শদাতা হয়ে ওঠার জন্য মেশিনরাও মানুষের সাথে সাথে বিবর্তিত হওয়া শুরু করতে পারে। এর অর্থ মেশিন লার্নিং, কোয়ান্টিটিভ ফাইনান্স বা পরিমাণগত অর্থনীতি এবং ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং-এর মতো প্রযুক্তির সমন্বয়ে সজ্জিত হয়ে একটি রোবটও ব্যক্তিগত আর্থিক উপদেষ্টা হয়ে উঠতে পারে।
.

# ৪. বীমা ব্যবস্থায় প্রযুক্তি

সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নির্ভর বীমা প্রতিষ্ঠান জনপ্রিয় হওয়ার মধ্য দিয়ে ইনস্যুরটেক বা ডিজিটাল বীমা প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হয়েছে। ডিজিটাল-অনলি বীমা প্রতিষ্ঠান ‘বো টাই’ (Bowtie) এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সহ-প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (কো-সিইও) ফ্রেড এনগান (Fred Ngan) এর মতে, কোভিড -১৯ মহামারী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর মারাত্মক আঘাত হেনেছে। তা সত্ত্বেও তার প্রতিষ্ঠান এ সময়ের মধ্যে ১০ গুণ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অথচ বিশ্বব্যাপী বীমা শিল্পে নতুন প্রিমিয়ামের হার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।

ব্যবসা-বাণিজ্যের মন্দার মধ্যেও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ডিজিটাল প্লাটফর্ম একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছে। কারণ, এখন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য এবং বীমায় অ্যাক্সেস পেতে অনেক বেশি লোক অনলাইনে আসছে। যে সকল দেশে বীমা বিক্রির ক্ষেত্রে সরাসরি লেনদেন জনপ্রিয়, সেখানে ‘বো টাই’-এর মতো প্রতিষ্ঠান নতুন ডিজিটাল বীমার মডেল সরবরাহ করে গ্রাহকের অভ্যাস পরিবর্তনে প্রভাব রাখছে। বর্তমানে প্রযুক্তির সাহায্যে ইনস্যুরটেক বীমা কেনাকে আরও সহজ এবং আরও সাশ্রয়ী করে তুলছে।
.

# ৫. একজন বিনিয়োগকারীর দৃষ্টিভঙ্গি

ফিনটেক খাতে বিনিয়োগ ব্যাপক ভাবে বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা এই খাতের স্টার্ট-আপগুলির জন্যে কী পরামর্শ রাখবেন? ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম ‘আরবার ভেনচার’ (Arbor Ventures)-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ব্যবস্থাপনা অংশীদার মেলিসা গুজি এ নিয়ে তার মতামত জানিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, কোভিড -১৯ মহামারীর ফলে ই-কমার্সের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার মতো আমাদের আচরণ এবং রুটিনে যেসব পরিবর্তন এসেছে, সেসবের ফলেই ফিনটেক খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। 
.

# ৬. জাতীয় পর্যায়ে ডিজিটাল মুদ্রার প্রচলন

অনেক দেশের সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকই এখন ডিজিটাল মুদ্রা বা সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি (সিবিডিসি) প্রচলনের মাধ্যমে কাগজের নোটের ঝামেলা থেকে মুক্ত হতে চাইছে। সিবিডিসি দীর্ঘমেয়াদে আরো মুক্তভাবে মূলধন প্রবাহের দরজা খুলে দেবে। কারণ, এতে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ আরও সহজে বিনিয়োগ প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। 

#অর্থ #ডিজিটাল #ভবিষ্যৎ