মহামারিতে অর্জিত যে ৫ দক্ষতা ক্যারিয়ারে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে


 মহামারিতে অর্জিত যে ৫ দক্ষতা ক্যারিয়ারে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে

মানব সম্পদ বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা মহামারির সময়ে এবং পরবর্তীকালে অনেকের ক্যারিয়ারের জন্যেই সময়টা একটু কঠিন হয়ে উঠবে। বিশেষ করে যারা কর্মক্ষেত্রে নতুন প্রবেশ করবেন, তাদের জন্যে মানিয়ে নেয়াটা দুরূহ হয়ে উঠতে পারে।

এ সময়ে অফিসে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে একত্র হওয়ার সমস্যা ছাড়াও আরো নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিবে। অনেকেই চাকরি হারাতে পারেন। কেউ কেউ আবার নিত্যনৈমত্তিক কাজগুলি ঠিকমতো করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়তে পারেন।

তবে সমস্যার পাশাপাশি করোনা মহামারির মধ্যে বেশ কিছু দক্ষতাও আপনাকে অর্জন করতে হচ্ছে। এসব দক্ষতা অন্যদের সামনে ঠিকঠাক তুলে ধরতে পারলে ভবিষ্যতে আপনার সহকর্মী বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে কাজের মাধ্যমে তাক লাগিয়ে দিতে পারবেন। আসুন জেনে নেয়া যাক এমন ৫টি দক্ষতার কথা।
.

#১. মানিয়ে নেওয়া

করোনা মহামারিকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করার মতো একটা পরিস্থিতি হিসেবে দেখা যেতে পারে। ফলে কীভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন, তার ওপর ভিত্তি করে কর্মক্ষেত্রে আপনার মানিয়ে নেয়ার সক্ষমতা কতটুকু, তা বোঝা যাবে। 

কোয়ারেন্টাইনের মধ্যে প্রতিদিনের কাজ সম্পন্ন করার পাশাপাশি বাসার অন্য সবার দিকে খেয়াল রাখার মাধ্যমেই একধরনের দক্ষতা অর্জন করছেন আপনি। বাসায় থাকা শিশুদের পড়ানো কিংবা পরিবারের বয়স্ক কোনো সদস্যের স্বাস্থ্যের ওপর নজর রাখার পাশাপাশি পেশাদারী কাজগুলি ঠিকমতো করতে পারলে বোঝা যাবে যে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আপনি একাধিক প্রকল্প সামলাতে জানেন। যেকোনো চাকরির ক্ষেত্রেই নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান একজন কর্মীর মধ্যে এই ধরনের দক্ষতা খুঁজে থাকে।
.

#২. ব্যক্তিগত যোগাযোগ

আমাদের সবার জন্যেই এই মহামারি একটি হতাশাজনক অভিজ্ঞতা। ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ে সবচেয়ে বেশি মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করার মতো একটি ঘটনা এটি। তবে সকলেই যেহেতু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, সেহেতু চাইলে ক্যারিয়ার সংক্রান্ত যেকোনো আলোচনার মধ্যেই বিষয়টা তুলতে পারেন। আবার, আলোচনার মাধ্যমে মহামারিকালীন অভিজ্ঞতার কোনো একটি বিশেষ দিককে আপনার ক্যারিয়ারের সঙ্গেও যুক্ত করতে পারেন।

মহামারির মধ্যে লাখ লাখ মানুষ যেভাবে সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষের প্রয়োজনে সাড়া দিয়েছে, সেটার কথাই ভেবে দেখুন। যদি জনকল্যাণমূলক কোনো কাজের জন্যে অর্থ দান করে থাকেন, হাসপাতালের লোকদের জন্য পিপিই বা মাস্ক বানিয়ে থাকেন বা জরুরি কোনো কাজে সাহায্য করে থাকেন, তার মানে হলো আপনি একজন সহানুভূতিশীল এবং সাহসী ব্যাক্তি।

ভবিষ্যতে যখন সহকর্মীদের সঙ্গে কোনো মিটিংয়ে থাকবেন, তখন মহামারির সময়ে তারা অন্যদেরকে সাহায্য করার জন্যে কী কী করেছে, তা জিজ্ঞেস করতে পারেন। দীর্ঘদিন পরে কর্মক্ষেত্রে দেখা হলে এ নিয়ে যেই আলাপ হবে, তাতে সবারই ব্যক্তিগত গল্প উঠে আসবে। এর মধ্য দিয়েই সহকর্মীদের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব ঘুচে যাবে।
.

#৩. প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা

মহামারির সময়ে প্রয়োজন অনুসারে প্রতিষ্ঠানের সবাইকে সাহায্য করতে পারলে সহকর্মী, বস কিংবা কর্মক্ষেত্রের অন্যান্যদের কাছ থেকে বাহবা পাবেন। ধরা যাক, ভবিষ্যতে কোনো অফিশিয়াল পার্টিতে বসে মহামারির সময়ে আপনি যেসব টুলস ব্যবহার করেছেন, সেসবের তুলনা ও পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করছেন। তখন কাজের সুবিধার জন্যে স্ল্যাক বা জুমের মতো যেসব সফটওয়্যার বা টুলস ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করেছেন, তা নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা সহকর্মীদের জানান। 

মহামারির এই সময়ে প্রয়োজনের খাতিরে যেসব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠেছেন, সেগুলির মাধ্যমেই ভবিষ্যতে পেশাদারী বিভিন্ন কাজ সহজে করতে পারবেন।
.

#৪. মনোযোগ

মহামারির এই সময়ে সারাক্ষণ ঘরে থাকার কারণে পেশাদারী বিভিন্ন কাজে মনোযোগ দেয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য অনেকেই মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন কৌশল শিখছেন। জুমের মাধ্যমে কোচিং, বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার অথবা কিছু সময়ের জন্য ঘরের বাইরে প্রকৃতিতে সময় কাটাচ্ছেন অনেকেই। এর মধ্য দিয়ে তারা এমন এক দক্ষতা অর্জন করছেন, যা সারাজীবনই তাদের কাজে লাগবে। এই দক্ষতার কারণে আপনি মানসিকভাবে দৃঢ় হওয়ার মাধ্যমে ক্যারিয়ারের অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

ক্যারিয়ারের বিভিন্ন জটিলতা বা সমস্যা সমাধানে ‘মানসিক চাপ’ বা ‘মনোযোগের অভাব’ বড় দুটি অন্তরায়। তবে মানসিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মননশীলতার মাধ্যমে এই দুটি সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। 
.

#৫. নিজের যত্ন

যেকোনো পেশাদারী পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা এবং নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারো জন্য অফিসে সুন্দর একটি স্যুট পরা আবার কারো বেলায় প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর মাধ্যমেই এই প্রয়োজন মেটানো সম্ভব। এর মাধ্যমে কর্মীদেরকে দেখতে সজীব লাগে এবং কাজ করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনে হয়। 

কোয়ারেন্টিনের সময় সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার মতো নিজের যত্ন নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজ করার মধ্য দিয়ে শক্তিশালী চরিত্র এবং ইচ্ছাশক্তির প্রমাণ রাখা যায়। এর মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব।

#করোনা #দক্ষতা #ক্যারিয়ার