১০ বছরের মধ্যেই প্যাকেজিং ডিজাইন ও প্রযুক্তি যেভাবে বদলে যাবে


 ১০ বছরের মধ্যেই প্যাকেজিং ডিজাইন ও প্রযুক্তি যেভাবে বদলে যাবে
 
আধুনিক যুগে এসে বিভিন্ন প্রোডাক্ট বা পণ্য বাজারজাত করার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো প্যাকেজিং। তবে প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে প্যাকেজিং-এর পদ্ধতি ও ডিজাইনে পরিবর্তন আসবে। প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ কেমন হবে, সে সম্পর্কে ধারণা নিয়ে আসা যাক এবার।

নতুন আসা প্রযুক্তি, গ্লোবাল ট্রেন্ড আর মার্কেটের ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণ করে প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রি আগামি ২০২৮ সাল বা তার পরে কোন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়াবে, সে ব্যাপারে আমরা বেশ ভালো একটা অনুমান করতে পারি।

আগামি এক দশকে প্রোডাক্ট বিক্রির পাশাপাশি সার্ভিস বিক্রিও হয়ে উঠবে ব্যবসার অনেক বড় একটা অংশ। গ্রাহকরা তখন তাদের প্রোডাক্ট ও শপিং এক্সপিরিয়েন্স, সব কিছুই একসাথে পেতে চাইবে।

প্রযুক্তির যত নতুন উদ্ভাবন আসবে, তত আমরা বৃহৎ পরিসরে প্রোডাকশনের বদলে স্পেশাল প্রোডাকশন ও সার্ভিস দেখতে পাবো। আর এমন স্পেশাল ব্র্যান্ডের জন্য প্রয়োজন হবে স্পেশাল ব্র্যান্ড প্যাকেজিং।
.

#১. বদলে যাবে প্যাকেজিং-এর ধারণা

আমরা এখন কার্ডবোর্ড বক্স, ব্যাগ, বোতলের মাধ্যমে প্যাকেজিং করি। তবে সামনে এগুলি একেবারেই বদলে যাবে। মানুষ তার সুবিধা মতো উপাদান ব্যবহার করবে প্যাকেজিং-এর জন্য। তখন উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিতে অনেক উন্নতি আসবে। ফলে এই খাতে ব্যবসার নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হবে।
.

#২. পচনশীল প্যাকেজিং

এডিবল প্যাকেজিং নিয়ে এখন বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এটি এমন একটি বিকল্প ব্যবস্থা, যা আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে সাহায্য করবে আর কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাবে। এখনকার সচেতন ভোক্তারা ঠিক এটাই চাচ্ছে। যেমন, শৈবালের নির্যাস, বিভিন্ন ফল ও সবজির খোসা প্রক্রিয়া করে তৈরি অর্গানিক ফুড কালার বা ফুড সুইটনার এরই মধ্যে ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে চলে এসেছে। হয়তো সামনে এমন প্যাকেজিং আসবে যে ভোক্তারা তাদের খাবারের মোড়কও খেতে পারবে। কী দারুণ একটা অভিজ্ঞতা হবে সেটা!
.

#৩. স্মার্ট প্যাকেজিং

একে ইন্টেলিজেন্ট বা অ্যাকটিভ প্যাকেজিংও বলা হয়ে থাকে। ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে এর ব্যাপক চাহিদা তৈরি হবে। ভোক্তার দিক থেকে দেখলে স্মার্ট প্যাকেজিংয়ে অনেকগুলি ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস তারা পাবে। যেমন ইউনিক আনবক্সিং এক্সপিরিয়েন্স, আকর্ষণীয় মোড়ক, ভেতরের প্রোডাক্টের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা, অথেনটিকেশন, সিকিউরিটি এবং কানেক্টিভিটি। 

ব্র্যান্ড বা কোম্পানির জন্যও নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। তারা ভোক্তাদের পছন্দ-অপছন্দ আরো সহজে ট্র্যাক করতে পারবে স্মার্ট প্যাকেজিং ব্যবহার করে। ফলে ভোক্তাদের চাহিদা মত প্রোডাক্ট বাজারে আনার ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডগুলি আরো দক্ষ হয়ে উঠবে। স্মার্ট প্যাকেজিং আসার পরে প্যাকেজিং নিয়ে আমাদের ধারণাই বদলে যাবে।
.

#৪. প্রিন্টেড ইলেকট্রনিক্স

প্রিন্টেড ইলেক্ট্রনিক্স বলতে বোঝানো হচ্ছে এমন প্যাকেজিং, যাতে সেন্সর থাকবে। যেমন, কোনো ইলেক্ট্রনিক্সের প্যাকেজিংয়ে যদি স্মার্ট LEDs/OLEDs থাকে তবে তা ভোক্তার জন্য হবে একটা নতুন অভিজ্ঞতা। এমন স্মার্ট প্যাকেজিংয়ের সাহায্যে ভোক্তারা প্রোডাক্টের সাথে ইন্টার‍্যাক্ট করতে পারবে, এর সম্বন্ধে জানতে পারবে, প্যাকেজে ডিজিটাল সেলস অ্যাড দেয়া যাবে, এমনকি অনলাইন কানেকশনও দেয়া যাবে।

এই প্রযুক্তির কিছু কিছু ব্যবহার অবশ্য এখনই আমরা দেখতে পাচ্ছি। যেমন near-field communication (NFC); radio-frequency identification (RFID) এবং ambient intelligence।
.
 
#৫. ন্যানোটেকনোলজি

অ্যান্টি ফিংগারপ্রিন্ট ন্যানো কোটিং প্রযুক্তি আসার পরে ন্যানোটেকনোলজি মার্কেট ২৫% প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এর সুফল যে কয়েকটি ইন্ডাস্ট্রি পেয়েছে, তার মধ্যে প্যাকেজিং অন্যতম।

ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে প্যাকেজিং-এর বর্জ্য টেকসই উপায়ে ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব। আধুনিক প্রযুক্তির বায়োন্যানোকম্পোজিট ভবিষ্যতে অপচনশীল প্ল্যাস্টিক বর্জ্যের জায়গা দখল করবে।

ভবিষ্যতে স্মার্ট প্যাকেজিংয়ে কার্ড সোয়াইপ করে অথবা স্মার্ট ডিভাইস স্ক্যান করার মাধ্যমে প্যাকেজিং থেকে যে যে সুবিধা পাওয়া যাবে:

· অধিকতর ট্র্যাকিং
· চুরি থেকে নিরাপত্তা
· বাড়তি ইনফরমেশন
· ডাইনামিক ভিজুয়াল
· অনলাইন সংযোগ
· ইন্টিগ্রেটেড প্রোডাক্ট ইন্টারেকশন
· সক্রিয় মনিটরিং 
ইত্যাদি 

আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ন্যানো ম্যাটেরিয়াল দিয়ে হাইজিনিক এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্যাকেজিং সিস্টেম গড়ে উঠতে দেখবো আমরা। মূলত মেডিকেল, ওষুধ কোম্পানি এবং খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেজিংয়ে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে।

এখন লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির প্রোডাকশনে ফেলা দেয়া চিপস প্যাকেজিংয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। এইভাবে ন্যানোটেকনজি দিয়ে আরও অনেক উদ্ভাবন সম্ভব, যার খুব সামান্যই আমরা এখন দেখছি। ভবিষ্যতে আমরা এ সেক্টরে আরও অনেক নতুন আবিষ্কার দেখতে পারবো, তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়।
.
 
#৬. অগমেন্টেড রিয়ালিটি

অগমেন্টেড রিয়ালিটির প্রসারের কারণে আমরা এর মধ্যে ধারণা পাওয়া শুরু করেছি ভবিষ্যতে ইন্টার‍্যাক্টিভ টেক কীভাবে প্যাকেজিং ডিজাইনে ভূমিকা রাখবে। আগামি ১০ বছরে ক্রেতারা নিজেরাই তাদের প্রোডাক্টের প্যাকেজিং টেস্ট করে দেখতে পারবে। একাধিক অপশনের মধ্যে থেকে বাছাই করার সুযোগ থাকবে তাদের কাছে। এমনকি গেমিং-এর এলিমেন্টগুলি ব্যবহার করে প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলি ব্র্যান্ডিং করবে। প্রোডাক্ট প্যাকেজিং-এর মতো বিষয় থেকে ভোক্তারা বিনোদন খুঁজে নিবে।

#প্রোডাক্ট #ভবিষ্যৎ #প্যাকেজিং