অনলাইনে উপার্জনের অন্যতম দুটি উপায়: ব্লগ এবং নিশ ওয়েবসাইট


 অনলাইনে উপার্জনের অন্যতম দুটি উপায়: ব্লগ এবং নিশ ওয়েবসাইট

আজকাল অনেকে ঘরে বসেই বিভিন্ন ভাবে অনলাইনে টাকা উপার্জন করছেন। অনলাইনে আয় করারও অনেক উপায় রয়েছে। গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, কন্টেন্ট রাইটিং, মার্কেটিং বা ফ্রিল্যান্সিং হলো এমনই কিছু উপায়। আবার অনলাইনে আপনার কোনো ওয়েবসাইট থাকলেও সেখান থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। 

ওয়েবসাইট তৈরির জন্যে প্রথমেই আপনাকে ওয়েবসাইটের ঠিকানা বা ডোমেইন নেইম ঠিক করতে হবে। এবং দ্বিতীয়ত ওয়েবসাইটের যাবতীয় তথ্য সার্ভারে সংরক্ষণ করার জন্যে ওয়েব হোস্টিং প্রোভাইডার নির্ধারণ করতে হবে। এভাবে খুব সহজেই আপনি নিজের একটা ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলতে পারবেন। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আয় করার জন্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক দুইটি উপায় হলো ‘ব্লগ’ আর ‘নিশ’ ওয়েবসাইট।
.

# নিশ ওয়েবসাইট কী

নিশ ওয়েবসাইট হলো এমন ধরনের ওয়েবসাইট, যেখানে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের ওপরে কনটেন্ট থাকে। নিশ ওয়েবসাইট থেকে টাকা আয়ের উপায় হচ্ছে ডিসপ্লে বিজ্ঞাপন এবং অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম। অবশ্য নিশ ওয়েবসাইটে প্রোডাক্ট বিক্রি করে বা সার্ভিস দিয়েও আয় করা সম্ভব। তবে সচরাচর নিশ ওয়েবসাইটে এমনটা করা হয় না।

নিশ ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিনের ট্রাফিক পাওয়া। যেকোনো ওয়েবসাইটে কতজন ভিজিট করলো, তার ওপর ভিত্তি করেই ট্রাফিক হিসাব করা হয়। এজন্যে এ ধরনের ওয়েবসাইটে ফোকাসড কীওয়ার্ড ও ফ্রেজ (Phrase) ব্যবহারের ওপর জোর দেয়া হয়। যদি আপনার নিশ ওয়েবসাইট থাকে, তাহলে কীওয়ার্ড রিসার্চের জন্যে Ahrefs অথবা SEMrush এর মতো সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। এসব সফটওয়্যারগুলি লো-কম্পিটিশন কীওয়ার্ড খুঁজে বের দেয়। এর ফলে গুগল সার্চে ওয়েবসাইটের র‍্যাংক উপরের দিকে থাকে।
.

# ব্লগ ওয়েবসাইট কী

ব্লগ ওয়েবসাইট অনেক ধরনের হতে পারে। ব্যক্তিগত বা মতাদর্শিক বিভিন্ন উদ্দেশ্যে লেখালেখির জন্যে অনেকে ব্লগ তৈরি করেন। তবে এখানে শুধুমাত্র যেসব ব্লগ ওয়েবসাইট টাকা উপার্জনকে উদ্দেশ্য করে তৈরি, সেগুলির কথাই আলোচনা করা হচ্ছে।

অনলাইনে টাকা উপার্জন নিয়ে ঘাটাঘাটি করলে দেখা যাবে, কিছু ব্লগার বছরে সিক্স বা সেভেন ডিজিট পর্যন্ত কামাই করে থাকেন। ব্লগ এমন একটা প্লাটফর্ম, যেখান থেকে প্রচুর টাকা আয়ের সম্ভাবনা থাকে।

ব্লগ থেকে যেসব উপায়ে অর্থ কামাই করা যায়:

    • ডিসপ্লে অ্যাড
    • অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামস
    • নিজের প্রোডাক্ট বিক্রি করা (সাধারণত ডিজিটাল প্রোডাক্ট)
    • স্পন্সরড কনটেন্ট পাবলিশ করা
    • সার্ভিস দেয়া (ফ্রিল্যান্সিং বা কনসাল্টিং)

নিশ ওয়েবসাইটগুলি তাদের বেশিরভাগ ট্রাফিক পায় গুগল সার্চ থেকে। তবে ব্লগাররা অন্যান্য বিভিন্ন উপায়ে ট্রাফিক পাওয়ার চেষ্টা করে। গুগল সার্চ ট্রাফিক যদিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিন্ত ব্লগাররা তাদের সোশ্যাল নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়েও নিজেদের ব্লগে ট্রাফিক আনে।

ব্লগ আর নিশ ওয়েবসাইটের একটা বড় পার্থক্য হলো রিপিট ট্রাফিকের ক্ষেত্রে। কিছু নিশ ওয়েবসাইট আছে যারা প্রায় তাদের সব ট্রাফিকই সার্চ ইঞ্জিন থেকে পায়। তার মানে, সেসব সাইটে প্রথম বার যারা ভিজিট করে, তাদের মাধ্যমেই ট্রাফিক তৈরি হয়। অন্যদিকে ব্লগাররা নির্ভর করে তাদের পাঠকদের ওপর, যারা বার বার তাদের লেখা পড়তে চায়। ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে এই ভক্ত পাঠকশ্রেণী তৈরি করাটাই মুখ্য ব্যাপার।

ব্লগারদের কাছে তাদের ভক্ত পাঠকদের ই-মেইল লিস্ট থাকে। এতে করে একদিকে পাঠকদের সাথে সবসময় কানেক্টেড থাকা যায় এবং অন্যদিকে পাঠকদেরও নতুন কন্টেন্ট খুঁজে পেতে সুবিধা হয়।

এভাবে সফল ব্লগারদের খ্যাতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, ভক্তরা আরো বেশি করে তাদের লেখা পড়তে চায়। এমন ব্লগার হতে পারলে টাকা কামানোর অনেক সুযোগ তৈরি হয়।

বিষয় বা টপিকের ব্যাপারেও ব্লগ আর নিশ ওয়েবসাইটের মধ্যে পার্থক্য আছে। নিশ সাইট যেকোনো বিষয়ের উপরেই হতে পারে, যেখানে কেবল ওই বিষয় নিয়েই কনটেন্ট থাকবে। অন্যদিকে ব্লগের ক্ষেত্রে টপিকের ব্যাপারটা অনেক নমনীয়। যেমন লাইফস্টাইল ব্লগে ভ্রমণ, ফিন্যান্স, ফিটনেস, ডায়েটিং অথবা অন্যান্য বিষয় নিয়েও লেখা থাকতে পারে।
.

# নিশ ওয়েবসাইটের সুবিধা

নিশ ওয়েবসাইটের বড় একটা সুবিধা হলো, সামনে কী করতে হবে, তা নিয়ে একটা ক্লিয়ার প্ল্যান থাকে। এমনকি অন্যদের কৌশল অনুসরণ করেও এখানে সফল হওয়া যায়। ধরা যাক, কোনো একটা বিষয়ে নিশ ওয়েবসাইট তৈরি করে ভালো আয় করলেন। এবার চাইলে একই উপায়ে অন্য আরেকটা বিষয়েও নিশ ওয়েবসাইট খুলতে পারবেন। তাছাড়া লো-কম্পিটিশন সার্চ ফ্রেইজ টার্গেট করার মাধ্যমে খুব সহজেই টার্গেট অর্জন করতে পারবেন। এজন্যে আপনাকে ওয়েবসাইট ডিজাইনিংয়ে দক্ষ বা এসইও এক্সপার্ট হতে হবে না।

একটা নিশ ওয়েবসাইট তৈরির পরে তাতে কনটেন্ট দেয়ার পর কিছুদিন অপেক্ষা করা লাগে। সাধারণত এই অপেক্ষার সময় থাকে ৬ থেকে ১২ মাসের মতো। তারপর গুগল থেকে ট্রাফিক আসা শুরু করে।
.

# ব্লগ সাইটের সুবিধা

ব্লগার হয়ে আপনি কত টাকা পর্যন্ত কামাতে পারবেন, তার কোনো সীমারেখা নেই। এমনও ব্লগার আছেন, যারা শুধুমাত্র একটা ব্লগ থেকেই বছরে মিলিয়ন ডলার আয় করেন। অবশ্য এর ব্যতিক্রম উদাহরণও আছে। তবে ব্লগিংয়ের মাধ্যমে টাকা আয় করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ রয়েছে।

নিশ ওয়েবসাইটে মূলত অ্যাড ও অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামিং দিয়ে টাকা কামাই করা গেলেও ব্লগারদের উপার্জনের অন্যান্য অনেক উপায় থাকে। যেমন, অনেক ব্লগারের উপার্জনের প্রধান উপায় হচ্ছে অনলাইন কোর্সের মতো ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি করা।

মোটকথা, ব্লগ বা নিশ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে অর্থ উপার্জনের অনেক সুযোগ রয়েছে। আপনার চাহিদা এবং সামর্থ্য অনুসারে আয় করার জন্যে যেকোনো উপায়ই ব্যবহার করতে পারেন।

#ওয়েবসাইট #ব্লগ #ট্রাফিক